আগুন রাঙা ফাগুনে
![]() |
এখন থেকেই যেন ফাল্গুনের ভ্রমরদের গুনগুনানি শুরু হয়ে গেছে। ফুল ফোটার অপেক্ষায় আছে তারা; মুখে নতুন মধু আর গায়ে হলদে রেণু দিয়ে মাখবে বলে। সময় ঘনিয়ে এসেছে নতুন বছরের প্রথম উৎসবের। দেরি না করে আপনিও প্রস্তুতি নিতে পারেন বসন্তের। বসন্ত ঋতুর ফাল্গুন মাস মানেই প্রকৃতিতে রঙের ছড়াছড়ি। ফুলের নানা রং আর সবুজ পাতার নতুন কুঁড়ির ঢঙের সঙ্গে মিলিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন নিেজকে।
বসন্তের সাজ আর পোশাক নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দিলেন পরামর্শ। পোশাক, সাজ আর অনুষঙ্গ—সবকিছুতেই থাকা চাই রঙের প্রাধান্য। হলুদ, কমলা কিংবা বাসন্তীকে প্রধান করে এর সঙ্গে মিলিয়ে অন্য রংও প্রাধান্য দেওয়া যেতে পারে বলে জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বরঙের নকশাকার বিপ্লব সাহা বললেন, ‘পোশাকের রংটা প্রথমে বেছে নিতে হবে। বসন্তে শুধুই কিন্তু হলুদ রঙের ফুল ফোটে না। নানা রঙের ফুল ফোটে। ফুলের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে তাই পোশাক হতে পারে হলুদ, কমলা, মেজেন্টা, বাসন্তী ইত্যাদি।’ তিনি বলেন, এবার বসন্তে দেশি সুতার কাপড় চলবে বেশি। এতে থাকবে ফ্লোরাল মোটিফের কাজ। সেটা হতে পারে ডাই, অ্যাপ্লিক, এমব্রয়ডারি কিংবা হাতের বুনন। উজ্জ্বল রঙের পোশাক এই ঋতুতে ভালো মানাবে বলে জানালেন বিপ্লব সাহা।
রাজধানীর বিভিন্ন শোরুম ঘুরে বাছাই করে নিতে পারেন পছন্দসই পোশাক। ছোট-বড় সবার জন্য দেশি ধাঁচের নিয়মিত পোশাকের মধ্যে পাবেন শাড়ি, সেলোয়ার-কামিজ, পাজামা-পাঞ্জাবি, ফতুয়া। একটু ভিন্ন ধাঁচের চাইলে নারীরা কিনতে পারেন তাগা, ফ্রক, কুর্তি বা কাফতান। পুরুষেরা বাছতে পারেন সেমি লং পাঞ্জাবি অথবা হাফ হাতা শার্ট, পোলো বা টি-শার্ট অথবা কাবুলি। নারীরা পাবেন পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকও। টপসের সঙ্গে মিলিয়ে খুঁজতে পারেন স্কার্ট, জিনস, লেগিংস, পালাজ্জো। যেহেতু বসন্তে হালকা বাতাস থাকে, তাই কিনতে পারেন কটি কিংবা পাতলা শাল। এর সবই পাবেন বসন্তের রঙে। পাবেন পাদুকা আর পার্সও।
হলুদ আর কমলা রঙের সঙ্গে মিলিয়ে হালকা ও গাঢ় সবুজ, ছাই রং দিয়ে পোশাকে নান্দনিকতা এনেছে ফ্যাশন হাউস আইকনিক। আইকনিকের স্বত্বাধিকারী তাসলিমা মলি বলেন, স্কার্ট-টপ, গাউন ও কুর্তা এবারের ফাল্গুনে খুব চলবে। তিনি বললেন, ক্রেতারা এখন লম্বা পোশাক পরতেই বেশি আগ্রহী।

মেকআপ
পারসোনার রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান বললেন, ফাল্গুনের সাজ হতে হবে হালকা। পোশাক ও আবহাওয়া বিবেচনা করেই সাজতে হবে। শুষ্ক এই দিনে মুখ ভালো করে ধুয়ে প্রথমেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে বললেন তিনি। এরপর মুখে ম্যাট ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিতে হবে। চোখ, ঠোঁটেও থাকবে ম্যাট সাজ। ব্যবহার করা যেতে পারে হলদে, কমলাভাব কিংবা পিচরঙা আইশ্যাডো। লিপস্টিকটাও পিচ রঙের হলে ভালো মানাবে। কানিজ আলমাস খান জানালেন, ইদানীং রিকশা পেইন্টিং ধাঁচের টিপ পাওয়া যায়। একটু ভিন্ন সাজতে চাইলে এই টিপ ব্যবহার করতে পারেন।
চুল
চুলটা এমন দিনে খোলাই ভালো লাগে বলে জানালেন ব্রাইডালের রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন। আর কেউ বাঁধতে চাইলেও সেটা আঁটসাঁট না হয়ে খুব হালকা বাঁধন হতে হবে। তানজিমা জানালেন, চুলে মেসি ভাব রাখলে ভালো লাগবে। তিনি বলেন, ‘চুলটা থাকবে অগোছালো, কিন্তু এর মাঝেও থাকতে হবে ছন্দ।’ পশ্চিমা ধাঁচের পোশাক পরলে সামনের চুলটা মেসি ভাব এনে পেছনে হালকা কার্ল করে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। আর বসন্তে চুল সাজাতে ফুলের বিকল্প নেই। এভাবে কার্ল করে ছেড়ে দিলে ছোট ফুল এলোমেলো করে গুঁজে নিতে পারেন। অনেকে ফুলের ব্যান্ড পড়তে ভালোবাসেন। এবার ব্যান্ডটা ভিন্নভাবে সাজিয়ে নিতে পারেন। তানজিমা শারমিন বললেন, ব্যান্ডের চারদিকে ফুল না দিয়ে একপাশে বেশি করে ফুল গুঁজে ব্যান্ডের বাকি জায়গাটা চেইন কিংবা ফিতা দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন। আবার দুপাশে ফুল গুঁজে ব্যান্ডের মাঝখানটাতেও চেইন বা ফিতা দিয়ে ঢেকে নেওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে দুপাশ থেকে চুল সামনে এনে খোলা ছেড়ে দিলে অথবা খেজুর বেণি করে নিলে ভালো লাগবে।
গয়না
বসন্তে ফুলের গয়নার বিকল্প হয় না বলে জানান বিপ্লব সাহা। ফুল দিয়ে চুল সাজিয়ে নিলেই হলো। তবে কানে ছোট দুল আর হাতভর্তি রেশমি কাচের চুড়ি খুব মানাবে। কানিজ আলমাস খান জানালেন, চাইলে কেউ পমপমওয়ালা কানের দুল কিংবা গলার মালা পরতে পারেন। তিনি পরামর্শ দিলেন কাচের চুড়িগুলো কয়েকটা রঙের একসঙ্গে মিলিয়ে পরতে।
ফুল
এ সময় গোলাপ, জারবারা, গ্ল্যাডিওলাস আর জিপসির সঙ্গে পাওয়া যাবে ক্যালান্ডুলা, চন্দ্রমল্লিকা, অর্কিডও। রাজধানীর শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ের ফুলের বাজার ছাড়াও প্রায় সব এলাকাতেই ছোটখাটো ফুলের দোকান পাওয়া যায়। ফুল ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দীন জানান, রাজধানীতে এত ফুল আসে সাভারের কাউন্দিয়া ও যশোরের ঝিকরগাছা থানার গদখালী এলাকা থেকে।
No comments:
Post a Comment