মোহীত উল আলমের ‘ইউনিকোডের ইলশে গুঁড়ি’
গল্পের রেশে-বেশে সমাপ্তির চিহ্ন মনের ফিডেবইটির পাতায় পাতায়, কবিতার পরতে পরতে তরুণ এক কবির উত্থান। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর। ঘটা করে পালিত হলো কবি ও কথাসাহিত্যিক মোহীত উল আলমের ৬৪ তম জন্মবার্ষিকী। সেই অনুষ্ঠানেই হয়েছিল ‘ইউনিকোডের ইলশে গুঁড়ি’ কাব্যগ্রন্থের পাঠ উন্মোচন। অথচ এই বয়সেও কবিমন সজীব, পাখায় আলোর নাচন, কবির দৃষ্টিতে রঙিন দুনিয়ার প্ল্যাটফর্ম। কবি সর্বদা প্রাণঢালা অভিবাদন জানাতে প্রস্তুত জীবনকে সহজ করে তোলার উপায়-উপকরণগুলোকে। ইউনিকোড আসার কারণে অনলাইনে বাংলা টাইপ কতটা সহজ হয়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই সুবর্ণ সুযোগধারী তরুণ প্রজন্মের একজন হয়েই যেন কবি আওয়াজ তোলেন কবিতায়,‘ইউনিকোড আসার পর তোমাকে লিখতে পারছি অনলাইন/ বাংলায়। অভ্রতে রেফ নিয়ে একটা জাঁক থেকেই যাচ্ছিলো,। ’ টাইপের সময় রেফের প্রয়োগ একটু জটিল। সেকথাই বলেছেন। পরবর্তীকালে আমরা ফেসবুকে যাঁরা কবির কবিতাপাঠের সাক্ষী তাঁরা দেখেছি, কবির ‘রেফ’ জয়। এই ইউনিকোডের কল্যাণেই কবি সম্ভবত শব্দের ইলশে গুঁড়িতে স্নান করাতে পেরেছেন ফেসবুকের কবিতার পাঠক-বন্ধুদের।
এই বইয়ের কবিতাগুলোর বিষয়, হতাশ হওয়া হাতে হাত রাখা প্রিয়জনরা, সরকারের পরিকল্পিত শিমুল বাগান, প্রেমিকার নামের ডিজিটের পাসওয়ার্ড, গাজীপুরের বৃক্ষবন, ত্রিশাল নামের গ্রামখানি, শ্যামাপাখি, মুখগ্রন্থ ( ফেসবুক), ঢাকাগামী ত্রিশালের পাঙ্গাস, উনুন ঘরের স্থায়ী বাসিন্দা মা, কর্ণফুলীর বাঁকে মোহনার মুখে তেলবাহী জাহাজেরা, ভেঁপুর শব্দ, স্বাস্থ্যের খোঁজে গোলাকার বৃত্তে ধ্যানরত গৃহবধূরা, সুরৎ মাঝি, গৃহশিক্ষক, ‘না’ কে ‘হ্যাঁ’ করার কনভার্টার ইত্যাদি।
এই গ্রন্থের প্রতিটি কবিতা হয়ে উঠেছে যেন আত্মকথার ভেতর দিয়ে আত্মোপলব্ধি। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে রচিত এসব কবিতায় শব্দের আখরে কবি নিজের মুহূর্তগুলোকেই যেন বিবৃত করেছেন। অনেকটা ব্যক্তিগত ডায়রিতে যেমনটি লেখা হয়, তেমনি কবিতার ছন্দে-ছন্দে, ভাষিক বলয়ে, চরণের চারধারে নিজের মুহূর্তগুলোকে কখনো সরাসরি, কখনো ইঙ্গিতে, কখনো উপমায়, কখনো রূপকে, কখনো বিমূর্ততায়, কখনো ‘তুমি’, ‘সে’ ইত্যাদি চিত্রণে খুব সাবলীলভাবে প্রকাশ করেছেন। যেন, কবি সহজ হল বলেই সব আয়োজন।
এই গ্রন্থের কবিতার বিশেষ প্রবণতা, খ- খ-, গুচ্ছ গুচ্ছ গল্প। অনুভূতি গল্পময় হয়ে কবিতাকথা হয়ে উঠেছে। সচেতন চোখের দেখা, প্রাণের বোধ কবিতাবাহনে প্রারম্ভ, মধ্যভাগ হয়ে গল্পের রেশে-বেশে সমাপ্তির চিহ্ন রেখে গেছে মনের ফিডে। এককথায়, অধিকাংশ কবিতা গল্পময়, ঘটনামূলক। এছাড়া, চলমান জীবনের ঘূর্ণির মধ্যে এসে মিশেছে অতীত থেকে ছুটে আসা স্মৃতির প্রবল ঢেউ! সহজ-সাহজ বাক্যগুলো আঘাতহানে মন-মগজে। কবিতার অনেক প্রয়োজনের মধ্যে আনন্দ আর অনুভূতির চাহিদা মেটাতেই যেন এগুলি!
ইউনিকোডের ইলশে গুঁড়ির এতেই আনন্দÑজীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ বিপুল সার-অসার পাঠকের পাঠে শপে দেওয়া কবির একান্ত নিবেদন-সমর্পণ। এটি কবির পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ, ৭১ টি কবিতার অঞ্জলি। আসছে অমর একুশে বইমেলায় বইটি পাবেন চৈতন্যের স্টলে। প্রচ্ছদ করেছেন তৌহিন হাসান। দাম ১৬০ টাকা।
No comments:
Post a Comment