মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী ২৫ জানুয়ারি
বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৩তম জন্ম বার্ষিকী আজ। উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি কবি ও নাট্যকার তথা বাংলার নবজাগরণে সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব মাইকেল মধুসূধন দত্ত এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন।
যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে মধুসূদন ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্ম গ্রহণ করেন।
জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কবির জন্মভূমি যশোরের কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরঘেঁষা সাগরদাঁড়ি মধুপল্লীতে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী মধুমেলা। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় যশোর জেলা প্রশাসন আয়োজিত এ মেলা ২১ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি কবির জন্মদিন হলেও ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষার কারণে দুদিন আগে থেকেই মেলা শুরু হয়।
মধুমেলায় আগত দর্শকদের জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যায় মধু মঞ্চে আলোচনাসভা ও উন্মুক্ত যাত্রা, কৃষিমেলা, সার্কাস, নাগরদোলাসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলা উপলক্ষে কয়েক হাজার দোকানপাট বসেছে। মেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ প্রশাসন।
মহাকবির জন্মবার্ষিকী এবং মধুমেলা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, জন্মভূমির প্রতি মাইকেল মধুসূদন দত্তের গভীর অনুরাগ আগামী প্রজন্মের কাছে দেশপ্রেমের চিরন্তন নিদর্শন হিসেবে চির-জাগরুক থাকবে।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, তার (মধুসূদনের) হাতে বাংলা সাহিত্য পেয়েছে নবরূপ, হয়েছে সমৃদ্ধ ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত। তিনি একাধারে বাংলা সাহিত্যে প্রথম মহাকাব্যের রচয়িতা, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, সনেট রচয়িতা ও আধুনিক শিল্পকলাসম্মত নাট্যকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অনন্য সাহিত্যকীর্তি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
মধুসূদন দত্ত বাংলা ভাষায় মহাকাব্য রচনা এবং বাংলা কবিতায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তনের পথিকৃৎ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা কাব্যের গতানুগতিক রীতি-প্রকরণ ভেঙে নতুন ছন্দ যোজনায় তিনি আমাদেরকে বিচিত্র কাব্য-সম্ভার উপহার দিয়েছেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের প্রথম সফল একজন নাট্যকার ও স্যাটায়র ধর্মী সাহিত্যেরও জনক-বাংলা সাহিত্যে অন্যতম সেরাকীর্তি ও মহাকাব্য ‘মেঘনাথবদ কাব্য।’ বাংলা সাহিত্যের এ বিয়োগান্তক মহাকাব্য রচনার পাশাপাশি মাইকেল মধুসূদন দত্তের অন্যান্য শ্রেষ্ঠ সাহিত্য সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে ‘বীরাঙ্গনা’ এবং তার অমিত্রাক্ষর ছন্দের বিখ্যাত কবিতা, নাটক শর্মিষ্ঠা, স্যাট্যায়ারধর্মী লেখা ‘বুড়ো শালিকের ঘাঁড়ে রো’ ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’ ইত্যাদি সৃষ্টি-যা বাংলা কবিতা ও সাহিত্যকে দিয়েছে নতুন আঙ্গিক ও বুদ্ধিদীপ্ততা।
নাটক, প্রহসন, মহাকাব্য, পত্রকাব্য, সনেট, ট্রাজেডিসহ সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অমর সৃষ্টি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে উন্নত মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
No comments:
Post a Comment