শততম (১০০তম ) টেস্ট স্মরণীয় করে রাখল বাংলাদেশ
Sri Lanka v Bangladesh, 2nd Test, P Sara Oval 2017

এ টেস্ট জয়ের ফলে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দলীয় সাফল্য পেয়েছে। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লঙ্কা জয় করেছে টাইগাররা। সঙ্গে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টেস্ট সিরিজ ড্র করলো লাল সবুজের দল। এ জয়ের আগে টেস্টে বাংলাদেশের রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল ২টি। এ নিয়ে হলো ৩টি। আর মোটের ওপর ১৮তম টেস্টে এসে লঙ্কা জয় করলো তারা। সার্বিকভাবে এটি বাংলাদেশের নবম জয়। জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের পর চতুর্থ দল হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে হারালো মুশফিকবাহিনী। দেশের বাইরে এটি টাইগারদের চতুর্থ জয়ও।
কলম্বো টেস্টে ব্যক্তিগত অর্জনও কম নয় বাংলাদেশের। শততম টেস্টে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড গড়েছেন সাকিব আল হাসান। ২২তম হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন তামিম ইকবাল। তার ৮২ রানের ইনিংসটি রান তাড়ায় বাংলাদেশ জিতেছে এমন ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ক্যারিয়ারে ১৭তম হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন মুশফিকুর রহিম। দীর্ঘদিন পর ক্রিকেটে ফিরে মুস্তাফিজুর রহমান জানান দিয়েছেন তার সব অস্ত্রই ঠিক আছে।
যে টেস্টে এতো দলীয় ও ব্যক্তিগত অর্জন তা জেতা খুব সহজ ছিল না বাংলাদেশের। স্মরণীয় টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে পঞ্চম ও শেষ দিনে ১৯১ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি টাইগারদের। দলীয় মাত্র ২২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলে টাইগাররা। ‘বার্থ ডে বয়’ রঙ্গনা হেরাথকে ডাউন দ্য উইকেটে মারতে গিয়ে উপুল থারাঙ্গাকে ক্যাচ দিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন সৌম্য সরকার (১০)। হেরাথের পরের বলেই স্লিপে গুণারত্নকে ক্যাচ দিয়ে একই পথে হাঁটেন ইমরুল কায়েস (০)।
এর সঙ্গে শুরুতেই ভীষণ চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে হার্ডহিটার সাব্বির রহমানকে নিয়ে ধীরে ধীরে সেই চাপ কাটিয়ে ওঠেন তামিম ইকবাল। তাদের শক্ত জবাবে শুরুর ধাক্কা সামলে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। দু’জনের ব্যাট থেকে ছুটে রানের ফোয়ারা। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল তারাই টেস্ট জিতে মাঠ থেকে বেরিয়ে আসবে। তবে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। দলীয় ১৩১ রানে পেরেরাকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সাজঘরে ফেরেন ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। তার আগে সাব্বিরের সঙ্গে ১০৯ রানের মহামূল্যবান জুটি গড়েন তিনি। বামহাতি ব্যাটসম্যান খেলেন ১২৫ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৮২ রানের অসাধারণ ইনিংস।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ ক্রিজে স্থায়ী হতে পারেননি সাব্বির রহমান। দলীয় ১৪৩ রানে দিলরুয়ান পেরেরার বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান করেন ৪১ রান। তার বিদায়ের সঙ্গে শঙ্কা জাগে বাংলাদেশ কি তাহলে টপাটপ উইকেট হারাতে যাচ্ছে! তবে তা উবে যায় সাকিব-মুশফিক অবিচ্ছিন্ন উইকেট জুটিতে চা বিরতি গেলে।
চা বিরতির পর ক্রিজে এসেই পেরেরার বলে বোল্ড হয়ে সাকিব ফিরে গেলে ফের সেই শঙ্কা জেগে উঠে। তবে মোসাদ্দেককে নিয়ে তা হতে দেননি অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। এক পর্যায়ে তারা জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বেন-এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে যায়। তবে নাটকের তখনো কিছু বাকি ছিল। জয় থেকে মাত্র ৩ রান দূরে থাকতে সাজঘরে ফেরেন মোসাদ্দেক। তিনি করেন ১৩ রান।
তবে মোসাদ্দেকের আউট গ্যালারির দর্শক ও বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর উচ্ছ্বাস থামাতে পারেনি। ২ বল পরেই হেরাথকে স্কয়ার লেগে সুইপ করে ২ রান নিয়ে সবাইকে বাঁধভাঙা আনন্দে মাতান মিরাজ। সমআনন্দে মাতেন ক্রিকেটাররাও। তবে বেশি উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায় অধিনায়ক মুশফিকের। শেষ পর্যন্ত তিনি অধিনায়কোচিত ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৩৮
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৬৭
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ৩১৯
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৫৭.৫ ওভারে ১৯১/৬ (তামিম ৮২, সৌম্য ১০, ইমরুল ০, সাব্বির ৪১, সাকিব ১৫, মুশফিক ২২*, মোসাদ্দেক ১৩, মিরাজ ২*; পেরেরা ৩/৫৯, হেরাথ ৩/৭৫, ডি সিলভা ০/৭, সান্দাকান ০/৩৪, লাকমল ০/৭, গুনারত্নে ০/৪)
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ১-১ ব্যবধানে ড্র
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল
ম্যাচ অব দ্য সিরিজ: সাকিব আল হাসান
২৬ ডিসেম্বর ২০০৪। নিজেদের শততম ওয়ানডেটা জয় দিয়েই উদ্যাপন করেছিল বাংলাদেশ। ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের কাছে ভারত হেরেছিল ১৫ রানে।
সেই বাংলাদেশ নিজেদের শততম টেস্টটাকেও রাঙালো জয় দিয়ে। কলম্বো পি সারা ওভালে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে চতুর্থ দল হিসেবে শততম টেস্টে জয় পেল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের আগে নিজেদের শততম ম্যাচে জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান। মজার ব্যাপার, বাংলাদেশের মতো এই তিনটি দলও নিজেদের শততম ওয়ানডেতেও জয় পেয়েছিল। তবে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান আগে জিতেছিল শততম টেস্ট, পরে শততম ওয়ানডে।
মাইলফলক টেস্টের জয় বাংলাদেশকে কী কী উপহার দিল, তা এক নজরে জেনে নেওয়া যাক।
১—১৮তম টেস্টে এসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ।
৪—জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের পর চতুর্থ দল হিসেবে বাংলাদেশের কাছে হারল শ্রীলঙ্কা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের চতুর্থ জয়ও এটা।
৯—বাংলাদেশের নবম টেস্ট জয় এটি। প্রথম ১০০ টেস্টে বাংলাদেশের চেয়ে কম জয় ছিল শুধু নিউজিল্যান্ডের (৭)।
৩—রান তাড়া করে তৃতীয়বারের মতো টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে গ্রেনাডা টেস্টে ২১৫ রানের লক্ষ্য পেরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ও ২০১৪ সালে মিরপুরে ১০১ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে জিম্বাবুয়েকে হারায় বাংলাদেশ।
৮—বাংলাদেশের শেষ আটটি টেস্ট জয়েই দলে ছিলেন সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। এই ত্রয়ী ছিলেন না শুধু ২০০৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ে।
৮২—তামিমের ৮২, রান তাড়ায় বাংলাদেশ জিতেছে, এমন ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০০৯ সালে গ্রেনাডা টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন সাকিব।
৩০০—এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ইনিংসেই ৩০০ রানের বেশি করেও হারল কোনো দল।
www.blogkori.tk
No comments:
Post a Comment