আমাদের ব্যাটসম্যানদের ৫০-৬০ রান অনেকগুলো করে আছে। আমরা চাই, ওরা এই জায়গাটায় উন্নতি করুক। কোনো ব্যাটসম্যান যদি তাদের পঞ্চাশের রানকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারে তাহলেই ভালো করা সম্ভব।
শ্রীলংকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের হাতছানি দেখছে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে পাওয়া বড় জয়টা এমন উপলক্ষের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দলকে। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচের একটিতে জিতলেই কাজ হয়ে যাবে। তবে তৃতীয় ওয়ানডে পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে চায় না টিম বাংলাদেশ। আজ ডাম্বুলায় অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতেই সিরিজ নিশ্চিত করেই কলম্বোয় যেতে চায় তারা। সেই চাওয়া পূরণে দলের ব্যাটসম্যানদের কাছে বড় ইনিংস আশা করছেন মাশরাফি।
শনিবার এই ডাম্বুলাতেই ৩২৪ রানের পাহাড় গড়ে বাংলাদেশ জিতেছে ৯০ রানের বড় ব্যবধানে। ব্যাটসম্যানদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সেই টাইগাররা লড়াইয়ের জন্য বড় পুঁজি পেয়েছে। এতে বড় অবদান ছিল সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবালের। ১২৭ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেছেন এই ওপেনার। মাশরাফি মনে করছেন, তামিমের সেঞ্চুরিটা না হলে দলের সংগ্রহ কিছুতেই অতটা বড় হতো না, 'গত ম্যাচে বড় সংগ্রহ হওয়ার কারণ একটাই, তামিম ৫০-৬০ রান করে আউট হয়নি। যদি ও (তামিম) ৫০-৬০ রানে আউট হতো, তাহলে নিশ্চিতভাবে ২৭০-২৮০ হতো।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৫০-৬০ রানের ইনিংস খেলে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে ফেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। অতীতে বহুবার এর দায় চুকাতে হয়েছে দলকে। ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেললে দলের পুঁজি বড় হবে। এই সত্য অনুধাবন করে দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলার তাগিদ দিয়ে রাখলেন মাশরাফি। সুযোগ এলে খেলতে বললেন যতটা সম্ভব বড় ইনিংস, 'আমাদের ব্যাটসম্যানদের ৫০-৬০ রান অনেকগুলো করে আছে। আমরা চাই ওরা এই জায়গাটায় উন্নতি করুক। কোনো ব্যাটসম্যান যদি তাদের পঞ্চাশের রানকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারে তাহলেই ভালো করা সম্ভব।'
মাশরাফি ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস খেলতে বলছেন, কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডের জন্য ডাম্বুলায় যে ধরনের পিচ প্রস্তুত করা হচ্ছে; কাজটা কঠিনই হবে। আগের ম্যাচের উইকেট ছিল ন্যাড়া। এবার সবুজ ঘাসে আবৃত উইকেট প্রস্তুত করছে আয়োজকরা। এমন উইকেট ব্যাটসম্যানদের দিকে নয়, পেসারদের দিকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রাখে। লংকানরা ইতোমধ্যে তাদের পেস শক্তি বাড়িয়ে নিয়েছে। শিবিরে যুক্ত করেছেন অভিজ্ঞ দুই পেসার নুয়ান কুলাসেকারা আর নুয়ান প্রদীপকে। মাশরাফি অবশ্য বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নন। কারণ, তার দলের ঝুলিতেও পর্যাপ্ত পেস-অস্ত্রো রয়েছে। তবে উইনিং কম্বিনেশন ভেঙে একাদশে কোনো পেসারকে যুক্ত করা হবে কিনা, সেটা নিশ্চিত করেননি মাশরাফি।
উইকেটে ঘাস থাকলেও সেটা পেসারদের কতটা সাহায্য করবে, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নন মাশরাফি। নড়াইল এক্সপ্রেস তাই জানিয়ে রাখলেন, একাদশ নির্বাচনে একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তারা। যদি মনে হয় উইকেট থেকে পেসাররা সাহায্য পাবে, উইনিং কম্বিনেশন ভেঙে ফেলতেও আপত্তি নেই বাংলাদেশের। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি তেমন আভাসই দিয়ে গেছেন। উইকেট নিয়ে তিনি বলেছেন, 'এখনো আমার মনে হচ্ছে, ভালো ব্যাটিং উইকেট হবে। কাল বোঝা যাবে ঘাস কোন অবস্থায় আছে, উইকেট কি অবস্থায় আছে, পানি কতটুকু দিয়েছে। এগুলো আসলে ম্যাচের দিন নিখুঁতভাবে বোঝা যাবে।'
উইকেট ব্যাটসম্যানদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রাখলেও আগের ম্যাচে দারুণ বোলিং করেছেন মাশরাফি। অন্য দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান আর তাসকিন আহমেদও স্বস্তিতে থাকতে দেননি লংকান ব্যাটসম্যানদের। দ্বিতীয় ম্যাচে পেস সহায়ক উইকেট হলে তাদের আরও ভালো করার সুযোগ তৈরি হবে। উইকেট নিয়ে অতশত না ভেবে মাশরাফি আস্থা রাখছেন তার বোলারদের ওপর, 'উইকেটের ঘাস পেসারদের কতটুকু সহায়তা করবে বলা কঠিন। এটা নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর। বোলার যারা আছে সবারই আত্মবিশ্বাস ভালো আছে। যে রকমই উইকেট থাকুক, আমার বিশ্বাস আমাদের এই দলের বোলারদের সামর্থ্য আছে উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে খেলার। আমরা সেভাবেই প্রস্তুতি নেব।'
মাশরাফিদের এই প্রস্তুতিটা যে সিরিজ জয়ের, সেটা না বলে দিলেও চলে। এমন সুযোগ খুব বেশি একটা পায় না বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের সিরিজে প্রথম ওয়ানডেতেই জয় পাওয়ায় সিরিজ জয়ের অন্তত দুটো সুযোগ পাচ্ছে টাইগাররা। মাশরাফি অবশ্য অপেক্ষা বাড়াতে চান না। কাজটা সেরে ফেলতে চান দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই, 'জিতলে আমাদের জন্য বিশাল একটি ব্যাপার হবে কি না? অবশ্যই। সেই সম্ভাবনা আছে। তার জন্য প্রথম ম্যাচে যেভাবে খেলেছি সেভাবেই খেলতে হবে।' সঙ্গে যোগ করেছেন, 'আমার পুরোপুরি বিশ্বাস আছে, আমরা আমাদের সেরাটা খেলব। আমরা যদি নিজেদের সেরাটা খেলতে পারি অবশ্যই সেরা সুযোগ থাকবে সিরিজ জেতার।'
বড় হারে সিরিজে পিছিয়ে পড়া লংকানরা যে আজকের ম্যাচে মরণ কামড় দিতে চাইবে, সেটাও অজানা নয় মাশরাফির। তবে সতীর্থদের এটা নিয়ে না ভেবে আবারও মাঠে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে মনোযোগ দিতে বলেছেন তিনি, 'আমি জানি, ওরা আপ্রাণ চেষ্টা করবে সিরিজে ফিরতে। ওরা ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে আছে। অবশ্যই চাইবে প্রথম থেকে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে, সেটা খেলার সামর্থ্যও আছে ওদের। আমাদের কাজ হবে পরিকল্পনাগুলো ঠিকঠাক মতো মাঠে বাস্তবায়ন করা।'
পরিকল্পনার সঠিক বাস্তবায়ন হলে সিরিজটা ৩-০ ব্যবধানে জয়ের সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের সামনে। সংবাদ সম্মেলনে সেই সুযোগের প্রসঙ্গটাও উঠল। প্রশ্ন ছুটে গেল মাশরাফির দিকে। টাইগার দলপতি অবশ্য খুশি হলেন না তাতে। শুধু বললেন, 'সিরিজ জিতলে আমাদের জন্য ভালো ইম্প্যাক্ট হবে। এর আগেই আমি ৩-০ ব্যবধানে যেতে চাই না। একটা ম্যাচ জিতি আর খুব তাড়াতাড়ি শুনে ফেলি ৩-০, ৩-০। এটা খেলোয়াড়দের জন্য একটা বাড়তি চাপ। আমার মতে, এখান থেকে বাইরে থাকাই ভালো।'
মাশরাফি জানিয়েছেন, তার দলের আপাতত লক্ষ্য দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলা। দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পেলে এরপর ভাববেন ওই ৩-০ সমীকরণ নিয়ে।
www.blogkori.tk
No comments:
Post a Comment