খরমা দেখলাম হঠাৎ
রাজশাহীর পদ্মাসংলগ্ন সিমলা পার্কে খরমা
সকালের মিষ্টি রোদে রাজশাহীর পদ্মাসংলগ্ন সিমলা পার্কে হঠাৎ একটা বাজ উড়তে দেখে ওর পিছু নিলাম। বাজের ছবি তোলার সময় ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে অদ্ভুত এক পাখির উপস্থিতি লক্ষ করলাম। এরপর পাখিটি চরের খেতে গিয়ে নামল। নামার স্পটটা লক্ষ করলাম, কিন্তু ভিউ ফাইন্ডারে ওকে খুঁজে পেলাম না। পাখিটা বেশ সাবধানি, বোঝা গেল। মিনিট পাঁচেক খোঁজার পর হঠাৎই ঘাগড়াগাছের পেছনে মাটির ঢেলার পাশে মূর্তির মতো দাঁড়ানো অবস্থায় ওকে আবিষ্কার করলাম। ওর দৈত্যকায় চোখের কারণেই স্পট করা সম্ভব হলো। কয়েকটা ভালো ছবি তুললাম।
এই পাখির নাম খরমা। ছোট হাঁটুভাঙ্গা, ছোট শিলাবাটান বা হাট্টিমা নামেও পরিচিত। বেশ বড় বড় ও ভয়ংকর চোখের পাখিটিকে কোনো কোনো গ্রামে রাক্ষুসে চ্যাগাও বলে। ইংরেজি নাম Indian Thick-knee বা Indian Stone Curlew. Burhinidae পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Burhinus indica.
খরমার দৈর্ঘ্য ৪০-৪৪ সেমি, প্রসারিত ডানা ৭৬-৮৮ সেমি ও ওজন ২৯০-৫৩৫ গ্রাম। মাথা ও চোখ বড়। হলদে লম্বা লম্বা পা। একনজরে বালু-বাদামি পাখি। দেহের নিচটা সাদা। পেট-তলপেট বাদে বুক-পিঠসহ পুরো দেহে কালচে-বাদামি দাগ। গলা ও ভ্রু-রেখা সাদা। ডানায় সমান্তরাল সাদা ও কালো ফিতা থাকে। চোখ হলুদ। পায়ের পাতা হলদে-সবুজ। ঠোঁটের গোড়া হলুদ ও আগা কালো।
খরমা বিরল আবাসিক পাখি। এত দিন পরিযায়ী বলে মনে করা হতো। সচরাচর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে দেখা
যায়। চা-বাগান, শুষ্ক বন, ঝোপঝাড়, নদীতীরে বিচরণ করে। রাজশাহী ছাড়াও কুষ্টিয়ার চরাঞ্চলে এদের দেখেছি। রাত ও ভোরে বেশি সক্রিয় থাকে। আঙুলের ওপর ভর দিয়ে হেঁটে বেড়ায়। পোকামাকড়, কেঁচো, খোলসহীন শামুক, ছোট সরীসৃপ, ইঁদুর ইত্যাদি সংগ্রহ করে খায়।
ফেব্রুয়ারি-আগস্ট প্রজননকাল। স্ত্রী ২-৩টি ডিম পাড়ে। স্ত্রী একাই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই বাচ্চার যত্ন নেয়। এরা প্রায় সাড়ে ১০ বছর বাঁচে।
(সংগ্রহীত)
No comments:
Post a Comment